মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন

ডাক বাক্স আছে চিঠি নেই

স্টাফ রিপোর্টারঃ সকালে বাড়ির সামনে হঠাৎ সাইকেলের টুংটাং শব্দ। ওই চিঠি, চিঠি আছে…বলে রানারের চেনা ডাকাডাকি। তারপর প্রিয়তমা দেখল তার প্রিয় সুদূর প্রবাস থেকে চিঠি লিখেছে। ‘এই যে শুনছো… নাও পত্র, বিনিময়ে দাও প্রেম।’ তখন হলদে খামে ভরা কাগজে মোড়ানো চিঠিতে এভাবেই ভালোবাসার বাক্য বিনিময় হতো। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে এমন আবেগের আমেজ একটু একটু করে দূরে গেছে। ডাকঘরের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে চিঠির জায়গা এখন মেসেঞ্জারের দখলে।

কথাগুলো সবই উনিশ শতকের। প্রতিটি প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ের ডাক ছিল ‘চিঠি’। যে চিঠি আসত ডাকঘরে। আর খামেভরা কাগজের চিঠির জন্য মানুষ ডাকঘরের সামনে অপেক্ষা করত ঘণ্টার পর ঘণ্টা কখন আসবে প্রিয়জনের চিঠি। চিঠি আসতে একটু দেরি হলে রানারের দুয়ারে ছুটত স্বজন কিংবা প্রিয়জন।

দিন পরিবর্তন হয়ে এখন রানারের দেখা মেলা ভার। কালেভদ্রে আসে দুয়েকটা চিঠি। যেখানে থাকে না আগের আওয়াজ আর আন্তরিকতা। এখন সেই ডাকবাক্সগুলোর আবেদন নেই। প্রিয়জনের চিঠির আশায় ডাকপিয়নের পথ চেয়ে থাকার দিনও ফুরিয়েছে।

মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ই-মেইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইমো ও ভাইবারসহ কত প্রযুক্তির সুবিধা আজ সবার জন্য অবারিত। শহরের তুলনায় পিছিয়ে নেই গ্রামও। গ্রামের মানুষের কাছে এখন এসব সুবিধা পৌঁছে গেছে। কালের বিবর্তনে ডাকঘরের গুরুত্ব হারিয়ে দিনের পর দিন তা জরাজীর্ণ হয়েছে। পড়ে আছে অবহেলায়। বিবর্ণ-হতশ্রী রূপ নিয়েছে গ্রাম-বাংলার ডাকবাক্সগুলো। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে নিয়ে চলছে ডাক সেবার কার্যক্রম। বেশিরভাগ জায়গায়ই নেই ডাকঘর। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ ডাকঘর দিনের পর দিন বন্ধ থাকছে। অনেক ডাকঘরে নেই কোনো ডাকবাক্স।

সময় পাল্টে গেছে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমাদের মানসিকতাও পাল্টে গেছে। সময় নষ্ট করে আর কেউ যেমন চিঠি লেখেন না, তেমনি চিঠি অনেক দেরি করে প্রিয়জনের হাতে পৌঁছে যাক এটাও কেউ চায় না।

কালের গর্ভে এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রিয়জনের কাছে হাতে লিখা চিঠি আর জৌলুস ছড়ানো ডাক বাক্সের কদর। এখন ডাক বাক্সে সরকারি চিঠি পত্র ছাড়া আর কোন চিঠিই পাওয়া যায় না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com